জাবি থেকে আমিয়াখুম
জাবি থেকে আমিয়াখুম
***জাবি-পদ্মঝিরি-আমিয়াখুম-নাফাখুম-রেমাক্রি-সাঙ্গু***
ভ্রমন সঙ্গীঃ রাকিব, নাঈম, রিপন, সানজিদা, জান্নাত, লিজা।
আগের দুরাত প্রোজেক্ট এর প্যারা নিয়ে ঘুম হয়নি। তারপর ইয়াংশা বাজার, লামা পার হয়ে “কানা মেম্বার আর্মি ক্যাম্প” ৮.০৬ মিনিটে। নাম টা সুন্দর না? আমাদের আইডি কার্ড এর ফটোকপি সাথে নিয়েছিলাম। জমা দেয়া হলো। আলিকদম পৌছালাম সকাল ৮.২১ এ। সেখানে মায়ের দোয়া হোটেলে ফ্রেস হয়ে চান্দের গাড়ী করে রোড অফ হ্যাভেন পাড়ি দিয়ে পৌছালাম থানচি ১১.৩৪ এ। আলীকদম টু থানচি রোডের মাঝে দেখে নিলাম #ডিম_পাহাড়। রাস্তার পাশ দিয়ে বয়ে চলছিলো মেঘ। পাহাড়ে মেঘে কি জানি এক ভালোবাসা, কি যেন এক গানের কবিতা। আহা কি সে হাওয়ার সুবাস। না গেলে তা ভাষায় অপ্রকাশ্য। তারপর থানচি থেকে জুম্মার নামাজ আর দুপুরের খাওয়া শেষ করে ১.৩৬ মিনিটে নৌকায় উঠি সুন্দরী #সাংগু নদি পাড়ি দিতে। সাথে যাত্রী হলো আমাদের গাইড জর্ডান দাদা। নৌকা চলছে, চলছে পানি, পাহাড়, পাথর আর অজস্র স্মৃতি।
প্রথম দিনঃ #পদ্মঝিরি
২.১৭ তে পৌছালাম পদ্মঝিরির মাথায়। তারপর ট্র্যাকিং শুরু। আমাদের এই ভ্রমনটি বেড়ানোর জন্য ছিলোনা। ছিলো নিজের দেশের প্রেমে পড়ার জন্য। ছিলো আরো একটু বাংলাদেশকে চেনার জন্য। ছিলো অ্যাডভেঞ্চারের। তাই এক পথে গিয়ে অন্য পথে ফেরা হয়েছিলো। সাধারনত এই পদ্মঝিরির দুর্গম পথ ব্যাবহার করে আমিখুম যাওয়া হয়না। কিন্তু আমরা কেন গিয়েছি তা বলেছি একটু আগেই। তো পদ্মঝিরি ট্র্যাকিং শুরু। পথে #চিংড়ি_ঝড়না দেখি ২.৫২ তে।
হাটছি তো হাটছি। হুট করে ছোট বোন লিজার সামনে একটা সবুজ রঙের ভাইপার সাপ। রিপন তার বীরত্ব দেখানোর সুজোগ পেয়ে যায়। হাতে থাকা ট্র্যাকিঙের লাঠিটা দিয়ে সজোরে আঘাত। এগিয়ে এলো রাকিব ও। সাপ নিমিষেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো। আমরা ছিলাম ৭ জাবিয়ান। আর পদ্মঝিরি তে পাড়ি দিতে হলো ৭ টি পাহাড়। নাম জানিনা। দেখলাম কতো আদিবাসী। তাদের কত জীবন। তাদের জীবনের কিছু গল্প। তাদের কষ্ট আর ভালোবাসা। যারা জীবনে খুব হতাশ দয়া করে এই পদ্মঝিরি ট্রেইল টা ট্র্যাক করে আসুন। জীবন এতো সহজে হার মানার নয়। পাহাড়ী কিছু শিশু ৭ টা পাহাড় আর এই ঝিরি পথে পানি, কাঁদার দুর্গম পথ পাড়ি দেয় স্কুলে যাবার জন্য। এই দূর্গম পথ যা অনেক শহুরে পুরুষ ও পাড়ি দিতে পারেনা সেই পথে আমাদের সাথে ছিলো জাবিয়ান ৩ নারী। ৩.৪০ এ পৌছাই রুনাজং পাড়ায়। তারপর আরো হাটি। আরো পাহাড়, আরো মেঘ কে সাক্ষী রেখে এগিয়ে চলছে আমাদের অভিযাত্রিক দল গাইড জর্ডানের সাথে। ৫.১৭ তে পৌছাই হরিচন্দ্র পাড়ায়। তারপর আরো হাটা। মাঝে মধ্যে হালকা বৃষ্টি মনে ভয় ধরায়। এই দুর্গম পথে বৃষ্টি হলে তা পাড়ি দেয়া প্রায় অসম্ভব। আমরা জিজ্ঞেস করিঃ আর কতদুর জর্ডান দাদা? দাদার একই উত্তরঃ “আর একটু উঠে আরেকটু নামতে হবে।” কোন দিকে? “সোজা”। অসংখ্যবার এই দুটো প্রশ্নের এই একি দুটো উত্তর পাওয়া গেছে।
আমরা ভয় পাইনি এক বিন্দু। বরং মনে হয়েছে আমার না দেখা বাংলাদেশ কতো সুন্দর। দূর থেকে ডাকছিলো তাজিং ডং। রাত ৮ টার দিকে কোন এক অজানা পাহাড়ের উপর নামলো এক পাগল করা জোছনা। আহা কি রুপ তার। জোছনার রুপালী আলোয় পাহাড় গুলো কি এক গল্প লিখে চলেছে। আমার স্মৃতিতে ঠাই নিবে জন্য। সেই জছনায় মনে পড়ে যায় আমার ফোনে নেটোওয়ার্ক নেই। কোথাও বিদ্যুৎ নেই। হয়তো কেউ ভাবছে আমার কথা। সেও দেখছে চাঁদ। অই চাঁদে তার প্রতিচ্ছবি দেখা যায়। অই পাহাড়ের নিভৃত কবিতায় তার কণ্ঠ মনে পড়ে। বাবা মা আমায় নিয়ে ভাবছে। মেঘের আদ্রতায় মায়ের চোখ ভেসে ওঠে। আমাদের পায়ের নিচে, পথের পাশে ভেষে যাচ্ছে মেঘ তখন। আমরা বসে বসে তখন জোছনা আর পাহাড়ের প্রেম দেখি। মাঝে মধ্যে মেঘ এসে খোচা দেয় তাদের।
এমনি সময় পেটে ছুচো দৌরাচ্ছিল। কোথা থেকে সেই পাহাড়ের উপর এক ত্রিপুরা এক ঝুড়ি সেদ্ধ করা ভুট্টা নিয়ে হাজির। কোথায় কার জন্য তিনি এগুলো নিয়ে যাচ্ছিলেন জানিনা। তবে আমরা পেট পুরে ভূট্টা খেয়ে শক্তি বাড়িয়ে নিলাম। ব্যাপারটা আমাদের অবাক করেছিলো। তখনো অনেক পথ বাকি। অনেক দুরের ত্রিপুরা পাড়ায় ছোট মিটি মিটি আলো দেখা যায়। অইখানে আমাদের গন্তব্য। হুট করে আগাতে গিয়ে খেয়াল হলো আমার ডান পায়ের হাটুতে অসহ্য ব্যাথা। এখনো জানিনা কেন সেই ব্যাথা। আছাড় ও খাইনি। চোট ও লাগেনি। ভূট্টা খেয়ে আগানোর একটু পর থেকেই সেই ব্যাথা। খুব কষ্ট করে আগাতে হচ্ছে আমার। কিন্তু আমার জন্য আমার বাকি অভিযাত্রিক দের আমি পেছাতে দিতে পারিনা। ছোট ভাই নাঈম বার বার একটা বাংলাদেশ সেনা বাহীনির শপথ আওড়াচ্ছিলোঃ “আমি কে? আমি বাংলাদেশের গর্বীত সৈনিক। দেহের শক্তি ফুরিয়ে গেলেও আমার মনের শক্তি কখনোই ফুরাবেনা।” আমিও মনে মনে তাই আওড়াচ্ছিলাম। রাত ৯টা বেজে যাচ্ছে। আমরা অন্ধকারে হাটছি। টর্চের আলো কমে আসছে। কিছু যায়গা এতোটাই ঘন জংগলে ভরা যে পাশের জনকে দেখা যায়না। পায়ের নীচে কখনো কাঁদা কখনো কোমর সমান পানি। কখনো বা ভয়ংকর পাহাড়। যেখানে এক পা ভুল ফেললেই পড়ে যাবো বিশাল খাদে। রাত সাড়ে ৯টা বেজে গেলো আমরা আমাদের গন্তব্য জিন্না পাড়ায় পৌছাইনি। আমার পা আর সইতে পারছেনা। ছোট ভাই রাকিব ছিলো এই ট্যুরের কনভেনার। তার চোখে মুখেও ফুটে উঠছে চিন্তার ছাপ। ছোট বোন জান্নাত, সানজিদা আর লিজা কে নিয়ে তার অনেক চিন্তা। তারা রিতিমত হাপিয়ে উঠেছে। গাইড কে আবার ও আর কতদুর জিজ্ঞেস করায় অই একই উত্তরঃ “আর একটু উঠে আরেকটু নামতে হবে। এইতো এসে গেছি। তারপর খাল পার হতে হবে।” রাত ৯টা ৪০ এ পার হলাম কোমর থেকে বুক পানি পর্যন্ত খাল। খালের পাড়ে হাটু সমান কাঁদা। কাঁদার শক্তি তখন আমাদের পায়ের চেয়ে অনেক বেশি। যাহোক খাল পেরিয়েই আমরা জিন্না পাড়ায় পৌছাই। আমরা থাকবো দাদার বাড়িতে। পায়ে কাঁদা ধুতে পানি দরকার। তারপর দাদার বাড়িতে ঢুকবো। কই তার বাড়ি? কই কল পাড়? ছোট ভাই নাঈম আর রিপনের প্রশ্ন। আমার সোজা সাপটা উত্তরঃ “আর একটু উঠে আরেকটু নামতে হবে।” যাইহোক রাত ৯.৫৪ মিনিটে প্রা ৮ ঘণ্টার ট্র্যাকিং করে পদ্মঝিরি পাড় হয়ে ৪০২২০ স্টেপ হেটে আমরা জিন্না পাড়ায় জর্ডান দাদার ভাই ড্যানিয়েলের বাড়িতে পৌছাই। বাশের মাচার তৈরী বাড়ি। বেশ পছন্দ হলো। সৌর বিদ্যুতের আলো আর ফ্যান আছে। রাতে গোসল দিয়ে পাহাড়ি রান্না খেয়ে ঘুম। প্রথম রাতে ঘুমিয়েছি ছোট ভাই রিপনের গল্প শুনতে শুনিতে। মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে যায়। মনে হয় পদ্ম ঝিরির আওয়াজ আসছে কানে। চোখ খুলে দেখি, নাহ পানি আসেনি। পাশে রাকিব শুয়ে নাক ডাকছে।
দ্বিতীয় দিনঃ #আমিয়াখুম
পরের দিন ঘুম থেকে উঠে প্রকৃতির ডাক সেরে খেয়ে আমরা রঊনা দেই দেবতা পাহাড়ের উদ্দেশ্যে। অই পাহাড়ের ওপারেই সেই রুপসী আমিয়াখুম। সেদিন আমাদের গাইড ড্যানিয়েলেরে ছেলে সীমান। ছোট দুটো পাহাড় প্রায় বিনা ক্লেশে, হেসে খেলেই পাড় হই আমরা। দেবতা পাহাড়ের নামে অনেক কিছু শুনে এসেছি। অনেক কঠিন। অনেক খাড়া। ভাই যাইয়েন্না। আসলে যারা পারেনি তারাই এসব বলে।
হেরে যাওয়া মানুষের পথ আমাদের জয়ের ঠিকানায় পৌছাতে পারবেনা। আমাদের কাছে দেবতা পাহড়কে পদ্ম ঝিরির কাছে তেমন কিছুই মনে হলোনা। সকাল ৮.৩০ টায় শুরু করে সকাল ১০ টার মধ্যেই আমরা দেবতা পাহাড়ের চূড়ায় পৌছাই। সেখান থেকে খাড়া ঢাল বেয়ে নেমে যেতে পারলেই আমিয়াখুম। ঢাল টা বেশ খাড়া। প্রায় ৭০ ডিগ্রি। এটা দেখেই সবাই ভয় পায়। তবে আমাদের ভয় লাগেনি। শুধু আমার হাটুর প্রচন্ড ব্যাথাটাই আমাকে ভোগাচ্ছিলো। যাই হোক সুন্দরের নেশায় অনেক ব্যাথাই ভোলা যায়। নামতেই আমার অনেক কষ্ট হচ্ছিলো। সীমান, রাকিব, সানজিদা বার বার আমাকে অনেক সাহায্য করেছে খাড়া ঢাল নামতে।
সকাল ১১.৩০ এ পৌছাই আমিয়াখুমে। কি অসহ্য সে সুন্দর। ভয়ংকর সুন্দরের প্রকাশ্য ভাষা আমার জানা নেই। গত ৩০ ঘণ্টার কষ্ট ৩০ সেকেন্ডে ভুলে গেলাম। অই পাশে দুর্গম এক পাহাড়। নাম সম্ভবত ডং ডং পাহাড়। অইটায় ওঠা নিষেধ আর অসম্ভব। আর এপাশে দেবতা পাহাড়। মাঝে প্রায় ৪০ ফুট উচু থেকে প্রবল স্রোতে অজস্র পানির ধারা নামছে আমিয়াখুমে। সাহসী সাতারুরার ঝাপিয়ে পড়ছে আমিয়াখুমের বুকে। আমাদের রাকিব, রিপন আর নাঈম ও ঝাপ দিলো আমিয়াখুমে। তারা তাদের জীবনের অন্যতম প্রশান্তি লাভ করলো। ঝাপাঝাপি আর ছবি তোলা শেষে আমরা হালকা শুকনো নাস্তা সেরে নিই। তারপর গন্তব্য সাত ভাই খুমে। কিন্তু বিধি বাম। ভেলা ছাড়া সেখানে যাওয়া যায়না। কোন ভেলা পাওয়া গেলোনা। আমরা দূর থেকে হেটে যতোটুকু দেখা যায় দেখে নিলাম। তারপর আমিয়াখুম কে পেছনে ফেলে ক্লেশ যুক্ত পাথুরে পথে হেটে পৌছাই ভেলাখুমের কাছে ২.১৫ তে। কিন্তু ভেলার অভাবে এইটার ও একদম কাছে যাওয়া হয়নি। তবে দেখেছি। দুই পাহাড়ের মাঝে আমাদের শব্দ প্রতিধ্বনি তৈরি করছিলো। শতবর্ষী গাছ গুলো চেয়েছিলো অনেক পুরোনো কিছু গল্পের মায়া নিয়ে। এক পাথরের উপর বসে আমরা ধ্যান মগ্ন হয়ে যাই। ধ্যান ভাংলে আমরা আবার ট্র্যাকিং করে পৌছাই দেবতা পাহাড়ের উপরে। নামার চেয়ে অর্ধেক সময়ে ৩.০৯ এ পৌছে যাই দেবতা পাহাড়ের চূড়ায়। একটু ঘামছিলাম। মনে হলো বৃষ্টি হলে মন্দ হয়না। হঠাৎ আকাশ ভেঙে মুষল ধারে বৃষ্টি। এমন বৃষ্টিতে ট্র্যাকিং করা খুবই বিপজ্জনক। তাই সময় ও লাগলো অনেক বেশি। যাওয়ার সময় যেখানে পানি ই ছিলোনা ফেরার সময় সেখানে হাটু পানি। পাহাড়ের খাড়া কাদামাখা পথ যেনো একেক টা মৃত্যু ফাঁদ। ছোট বোন জান্নাত রিতিমতো যুদ্ধ করে নেমেছে রাকিবের সহায়তায়। আমার হাটুর টান আরো বেড়ে গেলো। কি অসয্য সে যন্ত্রতা। তবু বৃষ্টির মধ্যে পাহাড়ের উপর থেকে আমার দেশ টাকে দেখে মনে হলোঃ “আমার এই দেশেতে জম্ন যেনো, এই দেশেতে মরি। ” সন্ধ্যার পর আমরা আবার জিনা পাড়ায় পৌছাই। রাতে চোর পুলিশ খেলে খেয়ে ঘুম। দ্বিতীয় দিনে ঘুমালাম নাঈমের জোক্স শুনে শুনে। ছেলেটার মাধায় জোক্সের ডিকসনারি আছে।
তৃতীয় দিনঃ #নাফাখুম #রেমাক্রি_ফলস
শেষ দিনে ভোর ৬ টায় বেরিয়ে পরি আমারা। আবার একটু উঠে আর নেমে পৌঁছে যাই রেমাক্রি খালে। খালের মধ্যে অসংখ্য পাথর থাকায় নৌকা চলেনা। হেটেই পাড়ি দিতে হবে। খালের পাড়ে বিশাল বিশাল পাথরের চাই। মনে হলো কোন এক ইংলিশ অ্যাডভেঞ্চার মুভিতে ঢুকে পড়েছি। তবে এটাও পদ্মঝিরির কষ্টের তুলনায় কিছুই না। মাঝে কয়েকবার খালের এই পাড় থেকে অই পাড়ে যেতে হলো। কারণ এক পাড়ের পাথর আর পথ এতোই দূর্গম যে আর আগানো যায় না। রেমাক্রির বিপুল স্রোত ঠেলে আমরা হাত ধরাধরি করে কয়েকবার খালের এক পাশ থেকে আরেক পাশে পৌছাই। তারপর আবার হাটতে থাকি। পথে উইলা পাড়া পাহাড় পার করি ৯.২০ এ। তারপর আবার ঝুম বৃষ্টি। আবার বন্ধুর পথ। যুদ্ধ শেষে ১২.২০ এ পৌছাই নাফাখুম।
আবার একবার পাগল হবার পালা। আলহামদুলিল্লাহ। আমাদের দেশ কতইনা সুন্দর। নাফাখুমের শুরুর পথে আমিও ডুব দিয়ে গোসল টা সেরে নেই। নাফাখুমের পাড়েই কিছু বাড়ি আছে। থাকার জন্য। অনেকেই এখানে এসেই থাকতে পারে। ২০/২৫ ফুট উপর থেকে পানির ধারা এসে পড়ছে। পাথরের বুক চিড়ে ভেসে যাচ্ছে সেই প্রবল পানির ধারা। এবার আমাদের ৪ সাহসী সৈনিক রাকিব, নাঈম, রিপন আর সানজিদা ঝাপ দিলো নাফাখুমের জলের স্রোতে। আগে কোন নারীকে নাফাখুমে ঝাপ দিতে দেখেছি বলে মনে পড়েনা। কিন্তু ইনি জাবিয়ান নারী। বুঝতে হবে। আমার ৩ জাবিয়ান ছোটবোন জান্নাত, সানজিদা আর লিজা। ৩ জনেই শাড়ী পরে নাফাখুমের পাড়ে ফটো শ্যুট করলো। এই ঘটনাও বিরল।
তারপর নাফাখুমের ঝাপাঝাপি শেষে আবার হাটা। অনেকদূর হেটে পেয়ে যাই নৌকা। রেমাক্রির অবাধ্য স্রোত ঠেলে পৌছে যাই #রেমাক্রি_ফলসে ৩.৩০ এ। এনেকটাই দেরি হয়ে গেছে। তাই আর দেরি না করে তাড়া তাড়ি আরেক নৌকায় চলে যাই অবাধ্য সাঙ্গু পাড়ি দিয়ে থানচি তে। সে কি স্রোত সাঙ্গু। নৌকা এই উল্টায় কি সেই উল্টায়। দুপাশে রুপশী বাংলার পাহাড়। আর সাঙ্গু নদীতে উথাল পাথাল ঢেউ। নৌকা প্রায়ই বারি খাচ্ছে নীচে আর পাশের পাথরে, অমনি অভিজ্ঞ মাঝি সামলাচ্ছে নৌকাকে। এই ঢেউয়ের মাঝে মোবাইলে নেটওয়ার্ক আসলো। আমাকে অবাক করে দিয়ে প্রথম কল টা বাবা মা বা সেই মেয়েটার কাছ থেকে না এসে আসলো অফিসের বসের কাছ থেকে। তাযীম তুমি কোথায়? আজ অফিসে আসোনাই? যাইহোক কথা শেষেই একের পর এক এসএমএস আসতে লাগলো। ঠিক যেভাবে সাংগুর ঢেউ আশছিলো। কেউ আমার সাড়া না পেয়ে কতোটা ব্যাকুল ছিলো বোঝা গেলো। বাবা মা আর ভাইয়ের ফোন ও আসল। কথা আর এস এম এস এর ঠেলায় পাশের উত্তাল স্রোতের কথা মাথায় ই ছিলোনা কিছুক্ষণ। পথে দেখলাম বড় পাথর, রাজা পাথর, রানী পাথর। অবশেষে থানচি পৌছাই ৫.৩০ এ। রাকিবের চোখে মুখে কালো চিন্তার ছাপ। কারন ৬ টার মধ্যে বিজিবি ক্যাম্প পার না হতে পারলে আজকে থানচিতেই থাকতে হবে। সারাদিনে আমরা কিচ্ছুই খাইনি। এর মধ্যেও ছেলেটা আমদের জন্য শুকনো খাবার কিনে উঠে গেলো চান্দের গাড়িতে। প্রচন্ড বেগে ছুটে চলছে চান্দের গাড়ি। আকাশে দেখা দিলো চাঁদ। মেঘ আর কুয়াশাও ঘিরে ধরেছে চারপাশ। এরি মাঝে পাহাড়ি ভয়ংকর সুন্দর রাস্তায় রকেটের বেগে চলছে আমাদের চান্দের গাড়ি। পুরো ট্যুরের সবচাইতে বেশি ভয় পাইলাম এই সময়। মাত্র ২১ মিনিটে পৌছে গেলেম ১৯ কিমি দুরের বিজিবি ক্যাম্পে ৫.৫৩ তে। আমাদের আইডি কার্ড দেখে আমাদের ছাড়া হলো। কোথা থেকে এক বুড়ি কিছু কলা নিয়ে আমাদের গাড়িতে আশ্রয় চাইলো। দিলাম। তারপর আকাশে চাঁদ, ভেসে যাওয়া মেঘ, কুয়াশা আর গান নিয়ে শেষ হলো আমাদের ট্যুর।
জানি আমার বাংলা বানানে অনেক ভুল। কিন্তু স্মৃতি আর অনুভুতিতে কোন ভেজাল ছিলোনা। আজ ফিরে এসেই লিখে ফেললাম এখন পর্যন্ত সেরা বাস্তব অ্যাডভেঞ্চার এর সারাংশ। কোন একজন মানুষ ও যদি পুরোটা পড়েন তাহলেই এই বাক্য ব্যয় স্বার্থক। তবে আরেকটা উদ্দেশ্যও আমার আছে। এই এক ছোট গল্পে জীবনের আসাধারন কিছু স্মৃতিকে আটকে রাখা। আবার সুযোগ এলে আবার চলে যাবো পাহাড়, নদি, হাওড়, সাগর, ঝড়নার কাছে। একটি হাত কে খুব মিস করেছি এই ট্যুরে। সেই হাত টা নেক্সট ট্যুরে মিস করতে চাইনা। যে হাত টা কখনোই আমায় ছেড়ে যাবেনা।
০৭-১০-২০১৯ তাযীম
For the Facebook post click here.
অনেক সুন্দর
ReplyDeleteIt was grate <3
ReplyDelete
ReplyDeleteJoss bro...
thanks <3
Deletenc
ReplyDeletethanks <3
DeleteOk bro
ReplyDeleteলিখা টা পড়ে ভালো লাগলো। ২০১৬ তে নাফাখুমের পানিতে ঝাপ দিয়েছিলাম, একবার না, চার বার! আমিও জাবিয়ান।
ReplyDeletethanks <3
Deleteআমাদের পায়ের নিচে, পথের পাশে ভেষে যাচ্ছে মেঘ তখন। আমরা বসে বসে তখন জোছনা আর পাহাড়ের প্রেম দেখি। মাঝে মধ্যে মেঘ এসে খোচা দেয় তাদের। sundor lekha, lekhar prem a pore gelam. sei hat ta hote chai
ReplyDelete