রোমাঞ্চকর একটি দিন - সায়েন্স ট্যুর ২০১৬

আমাদের "JUSC" ; মানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সায়েন্স ক্লাব। ক্যাম্পাসে এসেছি প্রায় তিন বছর হতে চললো। JUSC এর সাথে পথচলার সুযোগ ও হয়েছে আমার প্রায় তিন বছর। প্রতি বছর বিজ্ঞানের পথে আমারা অনেকটা দূর হাটার পরিকল্পনা করি। বছর শেষে স্মৃতির ফ্রেমে বেধে রাখার মতো সায়েন্স ট্যুর JUSC এর আরেকটি উপহার। মনে পড়ে ২০১৪ সালে আমার অংশ নেয়া প্রথম সায়েন্স ট্যুরঃ বিজ্ঞান জাদুঘরের কথা। আজ কেনো, কোনদিনি ভোলা সম্ভব না সেই দিনটি। তারপরের বছর সাফারি পার্ক এ। আর এবছর ২০১৬ তে আড়াই হাজার শিক্ষার্থী নিয়ে JUSC আয়োজিত সফল তৃতীয় গণিত অলিম্পিয়াডের পর সায়েন্স ট্যুর টা তৃষীত হৃদয়ে অমৃত হয়ে ধরা দিয়েছিলো।:)

ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই শুরু হয় সেদিনের ব্যাস্ততা। ভোর ছটার আগেই সাইদ ভাইয়ের ফোনঃ "তাযীম গেসো? আমার কাল সারা রাতে ১ ঘন্টা মাত্র ঘুম হয়েছে। টি শার্ট রেডী।" আমি বল্লামঃ "ভাই যাচ্ছি, আমিতো গিফট আর ফানবক্স প্যাক করে JUSC অফিস থেকে হলে গেসি রাত দুটোয়। ভোরে যদি উঠতে না পারি, তাই আর ঘুমাই ই নাই।" আর মনে মনে ভাবলাম সাইদ ভাই পারেন ও, এতোটা কর্মঠ ব্যাক্তি আমার জীবনে আমি কম ই দেখেছি।

আলো ফুটছিলো দিগন্তে, আর সপ্তম ছায়া মঞ্চে সবুজ প্রকৃতির ঠান্ডা কোলে আমরা BBH এর খিচুড়ি খেয়ে টি শার্ট নিয়ে দিনের প্রথম ফটো সেশান টা সেরে নিলাম। তখন আমার প্রিয়ো নীল রঙের টি শার্ট ছিলো অধিকাংশের গায়ে। তারপর এক ভো-দৌড় অনেকের। বাসের সিটের চেয়ে লোক সংখ্যা কিঞ্চিৎ বেশি কিনা, তাই। সাথে নেয়া হলো MMH হল এর দুপুরের খাবারের প্যাকেট। চলছিলো গাড়ী, কিন্তু উলাইলে গ্যাস নেবার পর সুমন ভাইয়ের বক্তৃতার চেয়ে অনেক ধীর গতিতে চলতে লাগলো বাস। অলিদের ড্রোন গ্রুপের গান, শ্রাবনের ভাড়া কাটা, আমাদের সকলের গান; নাতো দিয়েছে যাত্রা পথকে বোরিং হতে, নাতো কাউকে দিয়েছে ঘুমাতে। :আমার গ্রুপ ইনোভেটিভ, আরেকটিগ্রুপ অ্যাস্পিরিন এমন সাতটি গ্রুপ করা হয় ৭০ জন ট্রাভেলার কে সঠিক ভাবে পরিচালনার জন্য। এসব ক্ষেত্রে সায়েন্স ক্লাব অদ্বিতীয়।:)

তারপর পানাম নগরের উদ্দেশ্যে হাটলাম আমরা, বাস থেকে নেমে কারুশিল্প জাদুঘরের সামনে দিয়ে। কতকাল আগে কে কি স্বপ্ন বেধেছিলো প্রাচীন ঐশ্যর্যে্য তা কী ভেবে শেষ করা যায়? পানাম নগরের প্রতিটি ভাঙ্গা ইট ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে জায়গা নিলো আমাদের স্মৃতি কুঠুরিতে। আমরা ডিজিটাল যুগে তাদের কে ফটোর ফ্রেমে বাধার অনেক কসরত করেছি সেখানে। নির্দিষ্ট সময় মেনে চলতে শেখায় আমাদের JUSC। তাইতো সময় মতো পানাম নগর ঘুরে আবার আমারা সবাই নির্দিষ্ট যায়গায় একত্রিত হয়ে রউনা হই কারুশিল্প জাদুঘরের দিকে; সবাই মিলে পদব্রজে।

বিশাল এলাকা জুড়ে আমার সোনার বাংলার ছড়াছড়ি সেথায়। গ্রামের সাঁকো, নকশি কাঁথা, শিলা লিপি, মাটির তৈঁজস, কি নেই সেখানে। যতো হাটি ততো স্মৃতি বাঁধি বুকে আর মস্তিষ্কে। তারপর মানব চিত্র আঁকি আমরা। আমাদের JUSC কে আমরা ফুটিয়ে তুলি সবুজ ঘাসের বুকে আমাদের দিয়ে।

তারপর দুপুরের খাবার খেয়ে সোজা ভালোবাসতে চলে গেলাম বাংলার তাজমহলে। গান চললোঃ এই বুকে বইছে যমুনা, নিয়ে অথই প্রেমের জল, তাই দিয়ে গড়বো মোরা, মোদের প্রেমের তাজমহল। বাহ কি সুন্দর! আমার নামের সাথে মিল আছে যায়গা টার। পথে দেখা হলো পিরামিড। তাজমহলে গিয়ে আমরা অনেকেই হয়ে গেলাম সাধু কেউ বা প্রেমিক। আর রাতে লাইটিং দেখে সত্যিই হতে ইচ্ছা হলো শাহজাহান। শুধু মমতাজের অভাব। তারপর সায়েন্স কুইজ, ইংরেজি বর্জিত বক্তব্যের প্রতিযগীতা আর গতরাতে আমার বানানো ১৫ টি ছন্দে পরিচালিত ফানবক্স স্মৃতি কুঠুরির বাকি যায়গা গুলোও পূরণ করে দিলো। দিনশেষে অনেকেই প্রাইজ পেলো। আর ফিরে আসার বাসে হলো রাফেল ড্র। কেউ কেউ পেলো একাধিক পুরস্কার। আর আমি? একটাও না। 

বাসের মধ্যেই আমদের ট্যুর কে স্বার্থক কারক স্যার গণ, ট্যুর কনভেনার জাহিদ ভাই, অলিম্পিয়াড কনভেনার শুভো ভাই, সাঈদ ভাই, অলি আর আমরা সবাই মনের ভাব ব্যাক্ত করে বক্তব্য রাখলাম।:) শেষ হলো সফল ট্যুর।

যাইহোক, রাতে বাস থেকে নামার সময় আমি ঘটালাম এক বিপদ। আরিফের স্যান্ডেল নিয়ে নেমে পড়লাম একা। আর দিন রাত্রি শেষে মনে পড়লো এক কাজল দৃষ্টির কথাঃ আপনি পাশে বসেননি জন্যই তো অন্য কেউ বসেছিলো। সবাই চলে গেলো ক্যাম্পাসে। আমি চললেম আমার মতো একা...............।।

(২-১-২০১৭; তাযীম)

In samakal:


Theme images by lishenjun. Powered by Blogger.