যন্ত্রের ভাষা
__________________________________________________________
মা ভাত খাবো- কথাটি বললেই মা বোঝেন তার সন্তানের
ক্ষুধা লেগেছে । অনেক সময় না বললেও চোখ মুখ দেখেই মায়ের মন বোঝে তার সন্তানের
খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা । প্রথম টি বাহ্যিক ভাষা বোঝা, পরের টি মনের ভাষা বোঝা । আবার
কিছু না দেখেই খাওয়ার সময় মা খাওয়ার জন্য ডাকেন । যা নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট কাজ
করার জন্য মায়ের মস্তিষ্কের শ্রুতিলীন ভাষা গুলো তাকে করতে বলে । “কোন এক ডাহুক
ডাকা রাতে, জ্যোৎস্না শোভিত মাঠে, গাছের পাতার রিংটোন যখন নিরবতা ভাঙবে, তখন
হৃদয়ের আকুলতা ভেঙ্গে বলবো , ভালোবাসি তোমায় ।” ...এটাও এক শৈল্পিক ভাষা ।
ভাষার জন্য আমরা করেছি লড়াই । ভাষা দিয়েই ভালোবাসা , বাক যুদ্ধের অস্ত্রও ভাষা,
কোন কোন ভাষার প্রকাশ বাহ্যিক যুদ্ধেরও রসদ । আমার কথা গুলো কেউ বোঝেও ভাষা দিয়ে ।
মানে দাড়ালো ভাষা ছাড়া আমরা এক মুহূর্ত চলতে পারিনা । যারা বোবা তারা চলে কি করে ?
ভাষাহীন কথা গুলো মানুষ বোঝে কি করে ? ঐ যে মায়ের চোখ মুখ দেখে বুঝে যাওয়ার মতো ,
সেটাও মনের ভাষা । হ্যা, মানে অব্যাক্ত বাণীগুলোও মনের ভাষা।
আমদের আশে পাশে হাজার হাজার যন্ত্র দিন রাত
আমাদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে । মানুষের তৈরি এসব যন্ত্র গুলো ছাড়া মানুষেরই চলা দায় ।
হাতের কাছের মুঠো ফোন , কম্পিউটার ছাড়া আজকের সভ্যতা কল্পনিক। মোবাইল ফোনটি হারিয়ে
গেলে বা নষ্ট হলে বা দরকারের সময় চার্যহীন হলেই তা টের পাওয়া যায় । মনে কি প্রশ্ন
আসে না যে এই যন্ত্র গুলো , যেগুলো রাত্রিদিন অজস্র সেবা করে আমাদের জীবনকে আরো
সুন্দর আর সহজ করছে তারা কিভাবে কাজ করে? মানুষের চাহিদানুযায়ী কাজ করার জন্য কি
তাদের ভাষার দরকার পরেনা? আমার কম্পিউটার টিকে আমি কিছু কাজ করতে দিলাম সে কি সেটা
মায়ের মত বুঝে নিয়ে একা একাই করে দিবে? তার আগে কি তাকে কিছু শেখাতে হয়নি? কি করে
কঠিন সাধ্য হাজার কাজ মূহূর্তের মধ্যে আমাদের চোখের সামনে হাজির হচ্ছে? কখনো কি
জানতে ইচ্ছে হয় না? হ্যা আমরা যেমন মনের ভাষা, বাহ্যিক ভাষা, আবেগ, ভালোবাসার ভাষা
ইত্যাদি বুঝে তারপর কাজ করি কম্পিউটারের ও তেমনি ভাষার দরকার পরে তার সব কাজ করতে।
কম্পিউটার, মোবাইলের প্রতিটি কাজ হছে এই যন্ত্রের ভাষায় ভর করে। শুনে অবাক লাগছে
কারো কারো? তাহলে একটু নড়ে চড়ে বসুন আর চিন্তা করুন। কম্পিউটার একা একা কোন যাদু
মন্ত্রে বলিয়ান হয়ে কিছুই করেনা। মানুষ তাকে দিয়ে যা করায় সেগুলোই সে চোখের সামনে
আনে মাত্র। সেও মানুষের ই কাজের ফলে। কোন যন্ত্রের বাহ্যিক কাঠামো আর
ইলেকট্রিক্যাল অংশ গুলো তৈরী করে মানুষ যন্ত্র বানায়। আর সেই যন্ত্র কিভাবে চলবে,
কি কি কাজ করবে তাও লিখে দেয় মানুষ যন্ত্রের ভাষায়। মূলত যন্ত্রের ভাষা বলতে যা
বোঝায় তা হলো ০ আর ১। মানে বাইনারি সংখ্যা দিয়ে সকল কাজের প্রকাশ। ধরা যাক আমার
কাছে একটি LED ডিসপ্লে আছে, যাতে ৩ রঙের অনেক গুলো বাল্ব আছে। লাল,নীল,সবুজ; এই
তিন মৌলিক আলোর নানা রকমের বিন্যাসিত জলে থাকা ও নিভে যাওয়াই নানা কিছু ফূটিয়ে
তোলে ডিস্প্লেতে। আমি যদি যন্ত্রকে এমন ভাবে বানাই যে যখন ০ দিবো তখন লাল আলোটি
নিভে যাবে, ১দিলে জলে উঠবে। আর অন্য রঙের বাতি গুলোর জন্য আরো ভিন্ন ভিন্ন সংখ্যা।
তাহলে ভেবে দেখুন তো নানা রকমের সংখ্যা দিয়েই কিন্তু নানা প্রতিকৃতি তৈরি করা
সম্ভব। হ্যা এইতো যাদের কাছে অবাক লাগছিলো তারাও বুঝতে পারছেন যন্ত্রের ভাষা। ০ আর
১ দিয়ে প্রকাশিত ভাষাকে বলা হয় Machine Language। এই শুন্য আর এক কে বলা হয় Bit।
“Binary” এর “Bi” এবং “Digit” এর “t” নিয়ে তৈরি হয় এই শব্দটি। শব্দটি কি পরিচিত
লাগছে ? কোথায় যেন ছিলো ? হ্যা খুবি পরিচিত। একটি অডিও বা ভিডিও ফাইল নানা রকম
বাইটের হয়। কম্পিউটারের হার্ড ডিস্ক হয় গিগা বাইট বা টেরা বাইটে। আসলে সব ই এই
কম্পিউটারের বিট নির্মিত ভাষা সংরক্ষনের জন্য তৈরি। আমরা কম্পিউটার এ যত software,
audio, video, various files দেখি সব কিছুই ঐ ভাষা দিয়ে তৈরি। একজন প্রোগ্রামার
বিভিন্ন Programming Language এ program লেখেন আর কম্পিউটার সেই অনুযায়ী কাজ করে।
Programming Language দিয়ে তৈরি একটি প্রোগ্রাম এ আগেই বলে দেয়া আছে আপনি কি কি
input কিভাবে দিলে computer কি কি output দিবে। “Programming Language” এটা আবার
কি জিনিস? Machine Language এর কথা একটু আগে দেখলাম, কিন্তু পরেরটা আবার কি জিনিস?
কম্পিউটার ঐ ০ আর ১ দিয়ে তৈরি Machine Language ই বোঝে কিন্তু ঐ ০ আর ১ দিয়ে
মানুষের মনের ভাব বোঝানো খুবি কঠিন। কিন্তু Every problem has a solution in
Programming। তাই মানুষ তৈরি করেছে High Level Programming Language। তাই বলে এই
Programming Language আম জনতার সবাই যে বোঝে তাও নয়। প্রোগ্রামারগণ বোঝেন
কম্পিউটারের ভাষা। তারা Programming Language দিয়ে কোড করে তৈরি করেন একেকটি
প্রোগ্রাম ,একেকটি software। সেই High Level Programming Language এর ভাষা আবার
মানুষের তৈরি আরেকটি প্রোগ্রামের মাধ্যমে পরিনত হয় Machine Language এ। তারপর
কম্পিউটার সেই অনুযায়ী কাজ করে আমাদের output দিয়ে থাকে। এটা হল সরাসরি বাহ্যিক
ভাষায় কাজ করা। মা ভাত খাবো এর মতো। আবার মানুষ নানা রকম সমস্যার কথা চিন্তা করে
সেগুলো নানা প্রোগ্রামিং কোড দিয়ে সলভ করে যন্ত্রের মধ্যে সঞ্চিত করে রাখে। যাতে
পরবর্তিতে সময় মতো কাজ করা যায়। যেমন আজকের সেট করা অ্যালার্ম আগামিকাল ঠিক সময়
মতো বেজে উঠবে। এটা মায়ের সময় মতো খাবার দেয়ার মতো। আবার ইদানিং বিভিন্ন সমস্যার
মোকাবিলা করার জন্য লক্ষ লক্ষ সমস্যা ও তার সমাধানের প্রোগ্রামিং করে তা দিয়ে
train করানো হয় কম্পিউটার কে। যাতে ভবিষ্যতের বিভিন্ন্য সমস্যার সমাধান করতে পারে
এই যন্ত্র। একে বলা হয় Artificial Intelligence, যা অনেক টা ঐ চোখ দেখে মনের কথা
বোঝার মতো। তবে কম্পিউটার এখনো অতো বুদ্ধিমান হয়নি। কিছুটা হয়েছে। যেমন অভ্র কী
বোর্ডে ভূল বানান লিখলে সঠিক অনেক বানান ই চলে আসে যেগুলো দিয়ে কম্পিউটার কে train
করানো হয়েছে।
যা আজো হয়নি যন্ত্র দারা তা একদিন হতেই পারে ঐ
যন্রের ভাষার আরো ভালো ব্যাবহার দারা। মানুষ যেমন বাংলা,ইংরেজি,আরবি,হিন্দি এমন
আরো হাজার হাজার ভাষা ব্যাবহার করে তেমনি কম্পিউটারের কিছু High Level Programming
Language হল C(সি), C++ (সি প্লাস প্লাস), C# (সি সার্প ),
JAVA (জাভা), Python (পাইথন), Android (অ্যান্ড্রয়েড) ইত্যাদি ।
আপনারা গুগোল এ সার্চ দিয়ে যেকোনো ভাষা সম্পর্কে জানতে পারবেন। গুগোল কে যন্ত্রের
ভাষায় তা বলে দেয়া আছে। আমরা কি জানি বিশ্ব প্রোগ্রামিং এ বাংলাদেশের অবস্থা? সারা
বিশ্বেই প্রোগ্রামিং এর ব্যাপক চর্চা হয় প্রতিদিন । বিশ্বের সবচাইতে বড়
প্রোগ্রামিং এর প্রতিযোগিতা ACM-ICPC। সেই আসরে এই ২০১৫ সালের ওয়ার্ল্ড ফাইনালে
বিশ্বের নামি দামি হাজারো বিশ্ববিদ্যালয়কে পিছনে ফেলে বাংলাদেশের দুটি
বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ টি দল অংশ নিতে সমর্থ্য হয়। কোন বিশ্ববিদ্যালয় সে দুটি? কি মনে
হচ্ছে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়? নাকি BUET? না এদের কোনটাই নয় বিশ্বের আরো হাজার টি
বিশ্ববিদ্যালয় কে পিছনে ফেলে আমাদের প্রানপ্রিয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও
সিলেটের শাহজালাল বিঃ ও প্রঃ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে সেখানে।
এবং যথেষ্ট সম্মান ও বয়ে আনে দেশের জন্য। ২০১৬ সালে ধারাবাহিকতা বজায় রেখে
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আবারো হয়েছে ওয়ার্ল্ড ফাইনালিস্ট।
মানুষ আজ গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে যাচ্ছে । ছোট-বড়
ভালো-খারাপ কতই না কাজ করছে যন্ত্র দিয়ে। যেখানেই স্বনিয়ন্ত্রিত কোন বুদ্ধি দীপ্ত
কাজ হচ্ছে কোন ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্র দারা , সেখানেই ভেবে নিন কোন প্রোগ্রামার রাত
দিন এক করে দুনিয়ার চিন্তা ভুলে অক্লান্ত পরিশ্রম করে সেই কাজের সমাধের জন্য
যন্ত্রের ভাষায় যন্ত্রকে বলেদিয়েছিলো কি করতে হবে । আমরা এই যন্ত্রের ভাষার শক্তি
কে ভালো কাজে ব্যাবহার করবো ইনশাআল্লাহ। আরেকটি হিরোসীমা,নাগাসাকি বা টুইন টাওয়ার
ধ্বংস নয় আরেকটি নতুন আবিস্কার যা মানুষের অনেক অনেক দিন উপকার করে আপনাকে করবে
চির স্মরনিয়; তেমনি কাজে ব্যাবহৃত হোক যন্ত্রের ভাষায় লিখিত আপনার প্রোগ্রাম
.............।।